হার্ট ব্লক ও হার্ট ফেইলুর এবং ষ্ট্রোকে চিকিৎসা ইসিপি (এক্সটার্ণাল কাউন্টার পালসেশন) থেরাপিঃ- কাটা-ছেঁড়া বিহীন পদ্ধতিতে হৃদরোগের অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি।
ইসিপি থেরাপিঃ- কাটা-ছেঁড়া বিহীন পদ্ধতিতে হৃদরোগের অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। যার মাধ্যমে হৃদরোগীগণ সুস্থ্য হওয়াসহ প্রভূত আরোগ্য লাভ করে থাকেন। কোনরূপ ব্যথা-বেদনা বা কাটা-ছেঁড়া অথবা কোন রকম সুঁই ফোঁড়ানো ছাড়াই এবং হাসপাতালে ভর্তি বিহীন অবস্থায় এ থেরাপি নেওয়া সম্ভব। থেরাপি চলার সময় রোগী বিছানায় শুয়ে অন্যদের সাথে গল্প গুজব করতে পারবে, পেপার বা বই পুস্তক পড়তে পারবে, টিভি বা ভিডিও দেখতে পারবে এমন কি হালকা কিছু খেতে চাইলে তাও পারবে, চাইলে গান শুনতে পারবে। বুঝতেই পারছেন এত আতঙ্কিত হওয়া বা ভয় পাওয়ার মত কিছুই নেই। রক্তচাপ মাপার জন্য এক ধরনের কাফ (বন্ধনী) ব্যবহার করা হয় এবং চাপ নির্ণয়ের সময় তাতে পাম্প করে বাতাস ঢোকানোর হয় যা আমরা সবাই দেখেছি এবং ব্যবহার করেছি ঠিক একই ধরনের তবে বড় সাইজের বেশ কিছু কাফ উরু, নিতম্বে ও পা এ পরিয়ে তাতে হার্টের সংকোচন ও প্রসারণের সাথে তাল মিলিয়ে কাফ গুলোতে বাতাসের চাপ সৃষ্টি ও চাপ অপসারণ করে পাম্প সৃষ্টি করা হয়। যার ফলে রক্তনালীতে চাপের তারতম্যের কারণে শরীরের রক্ত প্রবাহের চাপ ও গতির পরিমান ২-৩ গুন বৃদ্ধি পায়। রক্ত প্রবাহের গতি, চাপ ও রক্ত সরবরাহের পরিমান বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন সৃষ্ট ব্লক খোলে যায় এবং ব্লকের পার্শ্ববর্তী অকেজো রক্তনালী খোলে যায় এবং আকারে বড় হয়ে থাকে এবং নতুন নতুন রক্তনালী সৃষ্টি হওয়ার মাধ্যমে ব্লককে বাইপাস করে ব্লকের ভাটিতে রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক করে । যার জন্য এই পদ্ধতিকে ন্যাচারাল বাইপাস বলে আক্ষায়িত করা হয়। যা কিনা সারা শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি, রক্তের মাধ্যমে পৌছেঁ দিয়ে হার্টের কাজকে বহুলাংশে সহায়তা করে। যার ফলে হার্টের কাজের চাপ কমে যাওয়ায় হার্ট আংশিকভাবে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারে। হার্টের কাজের চাপ বা কর্মভার (Work load) কমার ফলে হার্ট পুর্নগঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সারাদেহে অধিক পরিমানে রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে অনেক শারীরিক অক্ষমতা দূর করে, ফলে প্রচন্ড দূর্বল রোগীগণ কর্মচঞ্চলতা ফিরে পায় এবং অনায়াসে প্রয়োজনীয় শারীরিক কর্ম-কান্ড সম্পাদনের মাধ্যমে নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া এবং অত্যাবশ্যকীয় কর্মসম্পাদন করতে পারেন, যেমন- গোসল করা, অজু করা, নামাজ পড়া ইত্যাদি। সর্বোপরি বলা যায় যে, ইসিপি থেরাপি প্রচন্ড দূর্বল রোগীদের শারীরিক যোগ্যতা বৃদ্ধি করে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা আনয়নে সাহায্য করে থাকে।
ইসিপি থেরাপি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করে তা হলো রক্তচাপ ও রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে হৃৎপিন্ডের মাংশপেশীতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। ফলে ছোট ছোট অকেজো রক্তনালী খুলে গিয়ে হার্টের রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে বুকের ব্যথা প্রশমন করে। বিশেষ করে যখন পরিপূর্ণ মেডিকেল চিকিৎসার মাধ্যমে বুকের ব্যথা নিরাময় সম্ভব না হয় তখন ইসিপি থেরাপির ফলে হার্ট ব্লকের চারদিকে বন্ধ রক্তনালী খোলা এবং ব্লকের চারদিকে নতুন নতুন রক্তনালী সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাকৃতিক বাইপাস সংগঠিত করে থাকে। ফলে বাইপাস রক্তনালীর মাধ্যমে হার্ট ব্লককে বাইপাস করে হৃৎপিন্ডে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে। হার্টের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে হার্ট তার স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে পায়। হার্ট শক্তিশালী হওয়ায় আরও অধিক রক্ত পাম্প করে শরীরে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে শরীরের বিভিন্ন ভাইটাল অরগান যেমন- কিডনি, ব্রেইন, লিভার ইত্যাদি অঙ্গের দূর্বলতা, দূর করে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় সাহায্য করে থাকে।
* কোন ধরনের রোগীগণ ইসিপি থেরাপির মাধ্যমে উপকৃত হবেন? * হার্ট ব্লকের ফলে স্বাভাবিক কর্মসম্পাদনে বুকের ব্যথা বুকে চাপ অনুভব করেন তারা। * পরিপূর্ণ মেডিকেল চিকিৎসার ফলেও যে সকল হার্ট ব্লকের রোগীগণ ব্যথা মুক্ত থাকতে পারছেন না। * যে সমস্ত হার্ট ব্লকের রোগীগণ অন্যান্য অঙ্গের (কিডনি, লিভার, ষ্ট্রোক, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার জাতীয় অসুস্থ্যতায়, অতি মাত্রার ডায়াবেটিস ইত্যাদি) সমস্যার জন্য অথবা সর্বোপরি শারীরিক অযোগ্যতার জন্য বাইপাস ও রিং এর মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণে অযোগ্য।
* যাদের হার্ট ব্লক এমন ধরনের (বৈশিষ্ট্য) বাইপাস বা রিং প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। * যারা এক বা একাধিকবার রিং বা বাইপাস করার পরও আশানুরূপ উন্নতি লাভ করেন নাই অথবা পরবর্তিতে আবারও হার্টের অসুস্থ্যতায় আক্রান্ত হয়ে পরেছেন। * যাদের হার্ট ব্লক বিদ্যমান কিন্তু বাইপাস ও রিং এর মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণে আগ্রহী নন। * যে সকল হার্ট ব্লকের রোগীদের হার্ট খুবই দূর্বল, হার্টের পাম্পিং পাওয়ার (EF<৩৫%) বা তার চেয়েও কমে গেছে। * যে সকল হার্ট ব্লকের রোগীগণ হার্ট-ফেইলুর এ ভুগছেন (শরীরে ফোলে যাওয়া বা পানি জমা হওয়া ও অতি সহজে হাপিয়ে উঠছেন)। * অত্যাধিক দূর্বল ব্যক্তিগণ (যে কোন কারণে) যারা স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরে পেতে চান। * বয়সের ভারে ন্মজ্ব ব্যক্তিগণ যারা শারীরিক দূর্বলতার জন্য নিজের অত্যাবশ্যকীয় কার্যক্রম করতে অক্ষম। * যে সকল হার্ট-ফেইলুর রোগীগণ পূর্ণ মেডিকেল চিকিৎসার মাধ্যমেও হার্ট-ফেইলুর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না।